আমার শ্বশুর

দেখতে এটি একটি সাধারন চশমা। আমার কাছে মহা মূল্যবান স্মৃতি। আমার পিতৃতুল্য-শ্বশুর, ২০০৯ সালে পরম মমতায় এটি তৈরী করে দিয়েছিলেন মাত্র তিন ঘন্টায়। যখন এটি তৈরী করে দিয়েছিলেন তখন আমাদের খুবই ক্রান্তিকাল। চরম আর্থিক সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম দু‘জন একসাথে অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি করতে গিয়ে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট, দুপুরে চশমা ভেঙ্গে গিয়েছে। দেশের বাইরে চশমার অনেক দাম। আব্বা দুপুরে অভুক্ত থেকে তিন ঘন্টায় বানানো চশমা আমি এখনও পড়ছি। এমন অসংখ্য মমতার স্মৃতি রয়েছে আমাদের। আব্বা একজন বাহুল্য-বর্জিত, ভদ্র, নির্ভিক- একজন সাধারন ব্যক্তি ছিলেন। বিসিআইসিতে কর্মকালে প্রাপ্ত তাঁর সততার পুরষ্কারের সার্টিফিকেটগুলো গর্ব করে আমাকে দেখাতেন। যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়তে পারেনি, কিন্তু তাঁর সন্তানেরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারী উচুঁ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও বড় কর্মকর্তা। তাদেঁর সন্তানের মধ্যে দু‘জন অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে অবস্থিত আর্ন্তজাতিকভাবে খ্যাত দু‘টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছে বা অর্জনের পথে। পিতা হিসেবে এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কি হতে পারে। আমাদের প্রতি শ্বশুর-শাশুড়ীর শর্তহীন ভালোবাসা, আমাদের পেশাগত জীবনকে ও আমাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার পথ সুমসৃন করেছে। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের ধন্যবাদ দেয়ার বিষয়টি এক ধরনের মূর্খতা বলে আমি মনে করি। আমরা সবাই জানি, তাঁদের চলে যাওয়ার শূন্যতা কখনই পূরণ হবার নয়। সুসন্তান হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সমাজে অবদান রাখার মাধ্যমে তাঁদের প্রতি অবিরতভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা - একটি উত্তম পন্হা বলে অনেকে মনে করেন, আমরাও সেটা বিশ্বাস ও ধারণ করি । আব্বা-আম্মা, আপনারা আমাদের জীবনে রয়েছেন প্রতিদিন, আপনাদের দোয়া নিয়ে আমাদের দিন শুরু হয়। আমাদের সন্তানদের কাছে নানা-নানী সবসময় সবকিছুর উদাহরণ।
নয় মাসের ব্যাবধানে আমাদের শ্বশুর-শাশুড়ী দু‘জন আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন ২০১৩ সালে। আজকের দিনে, ২৬ অক্টোবর ২০১৩, আব্বা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন। সকলের প্রতি তাঁদের জন্য দোয়াপ্রার্থী।




Comments

Popular posts from this blog

পরিবেশ

Welcome to My Blog_AKM Nuruzzaman

আব্বা-আম্মা