Youth Development and Demographic Dividend [In Bengali]
যুব
সমাজ দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক। তাদের চোখে রয়েছে স্বপ্ন, বুকে রয়েছে অসীম সাহস। গতানুগতিক রীতি ভেঙ্গে সামনের দিকে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়া তাদের জীবনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। তাদের বৈশিষ্ট অনুধাবন করে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, তাঁর কবিতায় তারুণ্যের প্রতীক ছাত্রদের বিষয়ে বলেন -
“আমরা
শক্তি আমরা বল
আমরা
ছাত্রদল।
মোদের
পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান
ঊর্ধ্বে
বিমান ঝড় বাদল।
আমরা
ছাত্রদল॥”
১৫
কোটি ৮৫ লক্ষ জনসংখ্যার
বাংলাদেশে বর্তমানে যুবকের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭৬
লক্ষ। যা বাংলাদেশের মোট
জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। এখানে
যুবক বলতে যাদের বয়স ১০-২৪ বৎসরের
মধ্যে এবং ছেলে-মেয়ে উভয়কে বোঝানো হয়েছে। এ বিশাল যুব
শক্তি - জাতির কর্মশক্তির একটি বিশাল দ্বার খুলে দিয়েছে। যাকে জনমিতিক সুবিধা বলে থাকে। অর্থাৎ এ বিরাট কর্মশক্তিকে
সঠিকভাবে উপযুক্তস্থানে নিয়োজিত করা হলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতি দ্রুত হবে - দেশ দ্রুত উন্নত হবে। ‘জনমিতিক সুবিধা‘
-এর সুফল পেতে হলে যুবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে - রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে সকল সুযোগ
রয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করে একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের খুব কম সংখ্যক দেশে
এ সূবর্ণ সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, জাপানে বিগত কয়েক বছর যাবৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক। ইউরোপের অনেক দেশে এ অবস্থা বিরাজ
করছে। বিশ্বের জনমিতিক কাঠামোর এমন অবস্থায় বাংলাদেশে বর্তমানে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন উপযোগী একটি জনসংখ্যা কাঠামো রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের
যুবকদের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী সম্পন্ন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।
আজকের
যুব সমাজকে একদিন দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে। জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনের ব্রত তাদের গ্রহণ করতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাতিকে সমৃদ্ধ করা, জাতির সমস্যা সমাধান করা, বিশ্ব-সমাজে জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি করা - এসব কাজ করার দায়িত্ব আসবে আজকের যুব সমাজের ওপর। জীবনের বৃহত্তর পরিসরে সে দায়িত্ব যাতে
সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায় তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
জাতি
গঠনে যুব সমাজের দায়িত্বের দু’টি দিক
এখানে বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য। একটি নিজের জীবনকে যোগ্য করে গড়ে তোলা, অপরটি জাতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। আত্মস্বার্থে নিমগ্ন মানুষ যথার্থ মানুষ নয়, পরের কল্যাণে উৎসর্গীত জীবনই সার্থক জীবন। নিজেকে মানবিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করতে পারলেই ব্যক্তি ও জাতি উভয়েরই
কল্যাণ সাধিত হবে।
নিজেকে
সুযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য যুব সমাজের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে লেখা-পড়ায় নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ প্রদান করা। এ পর্যায়ে ছাত্রদের
অধ্যয়নই তপস্যা বলে মনীষীরা বলে গেছেন। তবে ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে একটি সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া যেন প্রধান লক্ষ্য না হয়, সেদিকে
লক্ষ্য রেখে জ্ঞানার্জনের দিকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।
পরোপকারের
মহান ব্রতে যুব সমাজকে উদ্দীপ্ত হতে হবে। লেখা-পড়ার ফাঁকে ফাঁকে যখন অবসর পাওয়া যাবে তখন জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। নিজের লোভ-লালসা সংবরণ করে সমাজের কল্যাণ সাধনকে যুব সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য বিবেচনা করতে হবে।
মনে
রাখতে হবে, কবির ভাষায় বলছি -
“পরের
কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ
জীবন মন সকলি দাও,
তার
মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার
কথা ভূলিয়া যাও।
পরের
কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ’ ‘সুখ’ করি
- কেঁদোনা আর;
যতই
কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই
বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে
লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে
নাই কেহ অবনী পরে
সকলের
তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে
আমরা পরের তরে।”
রাষ্ট্রের
স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় যুব সমাজের ভূমিকা অগ্রণী। আমাদের মহান স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশের তৎকালীন যুব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখতে হবে। যুব সমাজের মাধ্যমেই অনেকক্ষেত্রে জাতীয় জীবনে নতুন চেতনার সঞ্চার হয়। নতুন শতাব্দীর প্রারম্ভেই আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিজের দেশ
ও জাতিকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে যুব সমাজকে কাজ করতে হবে।
বিশ্বের
এ অঞ্চলের পারিবারিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক যুবককে মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা, বয়স্কদের প্রতি সম্মান, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনের
প্রতি ভালবাসা, প্রতিবেশী ও সমাজের প্রতি
সৌজন্য দেখিয়ে সুন্দর পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ
গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রীতি ও সৌজন্যের এ
চর্চা পরবর্তী জীবনে জাতির জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
আমি
জানি, বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র হিসেবে তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে পারেনি। তবুও সীমিত সম্পদের জনবহুল দেশে যুবকদের বিশ্বের মানদন্ডে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সদাশয় সরকার অক্লান্তভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ
করে যাচ্ছে। যেমন: বাংলাদেশ ভিশন ২০২১ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাছাড়া এসডিজি-এর আওতায় নতুন
নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে একটি যুব নীতিমালাও রয়েছে।
তরুণ
বন্ধুগণ, স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে। যুব সমাজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা। নিয়মানুবর্তিতা হল স্বপ্ন ছোঁয়ার
সিঁড়ি। নিয়মানুবর্তিতা বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত পন্ডিত শিব খেরা তাঁর বহুল বিক্রিত এবং উল্লেখযোগ্য “তুমিও জিতবে” বইয়ের শিক্ষণীয় একটি গল্প শুনাব ---
“সাত
বছরের ছেলে আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর জন্য তার বাবার কাছে বায়না করেছে। বাবা আর ছেলে মিলে
যখন আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই আচমকা ছেলেটি তার বাবার কাছে কৌতুহল বশত জানতে চাইল ‘বাবা’ কিসের জোরে ঘুড়ি আকাশে উড়ে? বাবা বলল আকাশে ঘুড়ি উড়ে সুতার জোরে। ছেলেটি বলল না বাবা ঘুড়ি
আকাশে ওড়ে বাতাসের জোরে। বাবা বলল ঘুড়ি কখনও বাতাসের জোরে নয় আকাশে উড়ে
সুতার জোরে। বাবা ছেলের এই তর্ক বেশ
জমে উঠছে। ছেলেটি বাবার কাছে বায়না করে বলল তাহলে তুমি প্রমান করে দেখাও কিভাবে ঘুড়ি বাতাস নয় সুতার জোরে
আকাশে উড়ে। বাবা বলল ঠিক আছে। তোমার কাছে এই কাচিট রাখ।
তোমার ঘুড়ি কি আকাশে উড়ছে,
বাতাস কি আছে? যদি
সবই ঠিক থাকে তাহলে তোমার হাতের কাচি দিয়ে ঘুড়ির সুতা কেটে দাও। ছেলে কথা মত উড়ন্ত ঘুড়ির
সুতা কেটে দিল। সুতা কেটে দেওয়ার পরপরই ঘুড়ি ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করল। বাবা ছেলেকে মজা করে জিজ্ঞেস করছে “তোমার বাতাস কি আকাশে আছে?
ছেলে বলল আছে; তাহলে তোমার ঘুড়ি আকাশে উড়ছে না কেন? কোন
প্রতিউত্তর নেই।”
মনে
রাখবে সুতা হচ্ছে ঠিক নিয়মানুবর্তিতার মত। জীবনে যদি নিয়মানুবর্তিতা না থাকে তাহলে
জীবনের কোন স্বপ্ন বাস্তবে ছোঁয়া যায় না। তাই নিজকে, নিজের পরিবারকে এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলা। নিয়মানুবর্তিতা মেনে স্বপ্ন দেখলে সে স্বপ্ন বাস্তবে
ধরা দিবে। এ প্রসঙ্গে সর্বজন
শ্রদ্ধেয় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে.
আবুল কালাম-এর একটি উক্তি
উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছেন -
“স্বপ্ন
সেটা নয় যেটা তুমি
ঘুমিয়ে দেখো
স্বপ্ন
সেটা যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয়না।”
পরিশেষে,
স্বপ্ন দেখা তরুণেরা, আমি তোমাদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আমার সাথে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কর্তৃক তোমাদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি কবিতার কিছু অংশ আবৃত্তি করার জন্য -
“চল
চল চল
উর্দ্ধ
গগনে বাজে মাদল,
নিম্নে উতলা
ধরণী তল
অরুণ
প্রাতের তরুণ দল
চল
রে চল রে চল
চল
চল চল॥
উষার
দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা
আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা
টুটিব তিমির রাত
বাঁধার
বিন্ধা চল॥”
It is an urgent need to think about youth. Otherwise, many countries will miss to capitalise the opportunity of demographic dividends.
ReplyDeleteঅসাধারণ একটি লেখা। পরিসংখ্যানগত বিষয়ের সাথে সাথে জাতীয় স্বার্থে সম্ভাবনাময় এই যুব সমাজের এগিয়ে নিতে হলে কি কি করার সুযোগ আছে তা সংক্ষিপ্ত হলেও স্পষ্ট।
ReplyDeleteআমরা ভাগ্যবান, সামনের তিন দশকে এদেশে কর্মঠ যুব সংখ্যা থাকবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি। শ্রমবাজারে এদের চাহিদা থাকবে অনেক উন্নত দেশেও। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে এই উদীয়মান যুব সমাজের সঠিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা এখুনি প্রয়োজন। যেমন- বিশ্বের শ্রম-বাজারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এদের গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত ও ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে যেখানে কারিগরি শিক্ষার সাথে থাকবে সামাজিক ও নৈতিক আদর্শের সংমিশ্রণ। শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতিতেও আনতে হবে পরিবর্তন। টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ ভিত্তিক জ্ঞ্যান সম্পৃক্ত করে উদ্ভাবন-মূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা জরুরী যা গতানুগতিক পাঠদান হতে উত্তম হবে।
যেহেতু এই যুব সমাজ ভবিষ্যতের নাগরিকদের অভিভাবক, তাই ভাল অভিভাবকদের জন্য বিশ্বদরবারের জ্ঞ্যান উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। কমিউনিটি ভিত্তিক জ্ঞ্যান বিনিময় হতে পারে এর একটি ভাল সমাধান। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) হতে উজ্জীবিত প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জন্য যে ক্লাবগুলো গড়ে তোলা হয়েছে, হয়ত একদিন সেগুলো হয়ে উঠতে পারে এক একটি অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র। মাদক, সামাজিক অপরাধ, অপরিণত বয়সে বিয়ে এগুলো যেন আমাদের যুব সমাজকে পিছিয়ে না দেয় তার জন্য কাজ করছে এক দল কিশোর-কিশোরী যারা শহর থেকে দূরে থেকেও জ্ঞ্যানের আলোয় আলোকিত করছে নিজ নিজ পাড়া মহল্লাকে । তারা জানে ও বিশ্বাস করে,"Think globally, act locally". আজ আমার যে শিশু আমার ঘরে লালিত পালিত, কাল সে যেন গোটা বিশ্বের জন্য হিতকর হয়। তাই আসুন উপরের লেখাটি মন দিয়ে বুঝি, বের করে আনি আমাদের প্রতিটি শিশুর মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা।